অনলাইনে আয়কৃত অর্থ বাংলাদেশে আনার ব্যাংক এশিয়া প্রথম বারের মত নিয়ে এলো “স্বাধীন” মাস্টারকার্ড। এ উদ্যোগে ব্যাংক এশিয়া কে সমহায়তা করছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়ার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এবং মাস্টারকার্ড।
আপনারা অনেকেই জানেন, বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি ব্যাংক ডুয়েল কারেন্সি ডেবিট কার্ডের সুবিধা দিচ্ছে। ইতিপূর্বে বেশ কিছুদিন আগে আমি এ ব্যাপারে একটি আর্টিকেল আপনাদের জন্য লিখেছিলাম তা ছিলো ইস্টার্ন ব্যাংক এর “EBL Aqua Prepaid MasterCard” সম্পর্কে। এর বাইরেও এক্সিম ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, সহ আরো বেশ কয়েকটি বাংলাদেশি ব্যাংক প্রিপেইড ডুয়েল কারেন্সী কার্ডের সুবিধা দিয়ে থাকে। এ কার্ড গুলো দিয়ে শুধুই বাংলাদেশ থেকে ইউজাররা দেশের বাইরে পেমেন্ট করতে পারতেন কিন্তু অনলাইনে আয়কৃত অর্থ বাংলাদেশে আনতে পারতেন না।
EBL Aqua Prepaid MasterCard নিয়ে আমার লেখা আর্টিকেলে সব থেকে বেশি যে প্রশ্নটির উত্তর আমাকে দিতে হয়েছে তা হলো “এর মাধ্যমে কি দেশের বাইরে থেকে পেমেন্ট আনা যাবে?”
উত্তর ছিলো – না
কারন এতোদিন বাংলাদেশের ব্যাংক গুলো থেকে যে ডুয়েল কারেন্সী কার্ড গুলো ইশ্যু করতো তার কোনোটাতেই এই সুবিধা ছিলো না। এ ব্যাপার টি আমাদের ফ্রিল্যান্সারদের জন্য ছিলো খুবই হতাসাজনক একটি ব্যাপার। পেপালের মত পৃথিবীর সবথেকে জনপ্রিয় পেমেন্ট সার্ভিস বাংলাদেশে না থাকা এবং পেওনিয়ার এবং নেটেলারের মত অনলাইন পেমেন্ট সার্ভিস সমূহ তাদের কার্ড সার্ভিস দিনে দিনে সংকুচিক করে ফেলার ফলে পেমেন্ট বংলাদেশে আনার ব্যাপার টা যখনই কষ্টকর হয়ে যাচ্ছিলো তখন অনলাইনে আয়কৃত অর্থ দেশে আনার জন্য ব্যাংক এশিয়া “স্বাধীন” মাস্টারকার্ডের উদ্যোগটি অনেক আশা যাগানোর মত একটা খবর বলা যেতে পারে।
স্বাধীন কার্ডটি পেতে হলে কি কি প্রয়োজন হবে?
কার্ড টি পেতে প্রথমেই আপনাকে ব্যাংক এশিয়ার নিকটস্থ কোনো ব্রাঞ্চের কার্ড ডিভিশনে যোগাযোগ করতে হবে। ব্যাংক এশিয়ার ব্রাঞ্চের লিংক এখান থেকে দেখে নিতে পারেন। এরপর:
- ০২কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- ন্যাশনাল আইডি কার্ড (অরিজিনাল কপি এবং ১টা ফটোকপি)
- পাসপোর্ট
- চার্জ ৫০০টাকা (ভ্যাট ৭৫টাকা) মোট ৫৭৫টাকা।
এগুলো নিয়ে ব্যাংক এশিয়ার আপনার কাছের কোনো ব্রাঞ্চে চলে যান। বাকি কাজ কার্ড ডিভিশনে দায়িত্বে থাকা অফিসার ই আপনাকে করে দিবে।
স্বাধীন কার্ডটিতে কি কি সুবিধা পাওয়া যাবে?
এবার আসাযাক কাজের কথায়। সবই না হয় বুঝলাম, কিন্তু কি কি সুবিধা পাবো এই কার্ডে?
- ব্যাংক এশিয়া “স্বাধীন” মাস্টারকার্ড একটি ডুয়েল কারেন্সি কার্ড। আপনি বাংলাদেশি “টাকা” এবং ইন্টারন্যাশনাল “USD” কারেন্সী তে লেনদেন করতে পারবেন।
এখানে একটা ব্যাপার উল্লেখ করা যায় যে আপনি ফরেন কারেন্সীতে কোনো লেনদেন করতে চাইলে প্রথমে আপনার পাসপোর্ট থাকা আবশ্যক এবং সেটা ব্যাংক থেকে এন্ডোর্সমেন্ট করিয়ে তারপর ই আপনি “USD” কারেন্সী তে লেনদেন করতে পারবেন এর আগে না। - মাস্টারকার্ড লোগো সম্বলিত যেকোনো মার্কেটপ্লেস থেকে আপনার ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে আয় করা অর্থ এই কার্ডের মাধ্যমে দেশে আনতে পারবেন।
- আপনার আয়কৃত অর্থের ৭০% আপনি ফরেন পার্টে খরচ করতে পারবেন। যেমন- আপনি ফাইভারে কাজ করেন। সেখান থেকে আপনার আয় ১০০ ডলার। আপনি এই ১০০ডলার ব্যাংক এশিয়া “স্বাধীন” মাস্টারকার্ড এর মাধ্যমে বাংলাদেশে আনলেন। এখান থেকে আপনি সর্বোচ্চ ৭০ডলার USD পার্টে খরচ করতে পারবেন একং ৩০ডলার সমমূল্যের টাকা ১ ডলার = ৮০টাকা হিসেব করলে ২৪০০টাকা। যদিও এখন ডলার রেট ৮৩-৮৫টাকা) বাংলাদেশ থেকে তুলতে পারবেন।
তবে আপনি চাইলে পুরো টাকাই বাংলাদেশ থেকে তুলতে পারবেন। এ ব্যাপারে কোনো বিধি নিষেধ নেই। কিন্ত USD কারেন্সী থেকে কেনাকাট করলে তা আযকৃত অর্থের ৭০% এর বেশি করা যাবে না। - সব ধরনের ATM মেশিন থেকে টাকা উত্তোলন করা যাবে।
- দেশে এবং দেশের বাইরে ATM এবং POS মেশিনের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন এবং পেমেন্ট দেয়া যাবে।
- ই-কর্মার্স এবং অনলাইনে সব ধরনের কেনাকাটা (বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক)
- কার্ডে মাইক্রোচিপ সংযুক্ত থাকবে যা, ডাটা এবং সিকিউরি এনশিওর করবে।
- টাকা জমা, পেমেন্ট আসা এবং টাকা উত্তোলন সহ প্রতিবার ট্রানজেকশনে SMS এলার্ট আসবো মেবাইলে।
- ইন্টারনের ব্যাংকিং সুবিধা।
- ২৪ঘন্টা কল সেন্টার সার্ভিস।
আশাকরি আপনারা পুরো ব্যাপার টি সম্পর্কে পরিস্কার ধারনা পেয়েছেন। আরো কোনো তথ্য জানার থাকলে সরাসরি ব্যাংকে না গিয়ে আপনারা ব্যাংক এশিয়ার হনলাইন নাম্বারে যোগাযোগ করতে পারেন।
লেখাটি ভালো লেগে থাকলে শেয়ার করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ।