ফ্রিল্যান্সিং শুরুর পর থেকেই বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা সব থেকে বেশি যে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম অনলাইন পেমেন্ট সমস্যা। পেপাল (PayPal) এর মত সার্ভিস বাংলাদেশে না থাকার কারনে আমরা যেমন অনলাইনে কষ্টার্জিত আয় দেশে আনতে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি তেমনি দেশের বাইরে থেকে অনলাইনে কেনাকাটার সুযোগ আমাদের জন্য সীমিত বললেই চলে। কিছুদিন আগে পেপাল (Paypal) এবং জুম (Xoom) নিয়ে বাংলাদেশে অনেক বিতর্ক চলেছে, যদিও বা জুম এর মাধ্যমে শুধু পেমেন্ট বাংলাদেশে আনা সম্ভব কিন্তু দেশের বাইরে থেকে ফরেন কারেন্সীতে কোনো কিছু কেনাকাটা সম্ভব না।
দেশের বাইরে থেকে কেনাকাটার জন্য যে জিনিসটা প্রয়োজন তা হলো একটি ভেরিফাইড কার্ড।
- যেকোনো ব্যাকের ক্রেডিট কার্ড (ডুয়াল কারেন্সি)
- ডিজিটাল পেমেন্ট সার্ভিস গুলোর প্রিপেইড কার্ড (নেটেলার, পেওনিয়ার ইত্যাদি) ।
ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড
ব্যাংকগুলো থেকে ক্রেডিট কার্ড নেয়া অনেক সমস্যার ব্যাপার। এবং সবাই এটা পায় না। কারন ক্রেডিট কার্ড পেতে হলে আপনাকে বেশ ভালো বেতনের একটি চাকুরি করতে হবে। এর বাইরেও অনেক কাগজপত্র এবং ডকুমেন্টস এর ব্যাপার থাকে। যার মানে যেকোনো ব্যাংকে একাউন্ট খোলা এবং ক্রেডিট কার্ড পাওয়া এক কথা নয়। ক্রেডিট কার্ডের খরচ সাধারন যেকোনো কার্ডের বেশি এবং এতে অনেক ধরনের হিডেন (গোপন) চার্জ থাকে। তাছাড়া আপনি যখনই ইন্টারন্যাশনাল পেমেন্ট ব্যবহার করতে যাবেন তখন অবশ্যই পাসপোর্টে ডলার এনডোর্স করে নিতে হবে। অর্থাৎ কার্ডের পাশাপাশি আপনার পাসপোর্ট ও থাকতে হবে।
ডিজিটাল পেমেন্ট সার্ভিস
ডিজিটাল পেমেন্ট সার্ভিস গুলোর মধ্যে নেটেলার, পেওনিয়ার বাংলাদেশে সবথেকে বেশি জনপ্রিয়। তবে এক্ষেত্রেও রয়েছে বিভিন্ন সমস্যা।
নেটেলার (Neteller) ২০১৬ সালের শেষের দিক থেকে বাংলাদেশে তাদের Net + কার্ড দেয়া বন্ধ রেখেছে।
পেওনিয়ার(Payoneer) ও ২০১৭ এর অক্টোবর-নভেম্বর এই ২ মাসে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর কার্ড বাতিল করে দিয়েছে। এবং গত ২ মাস ধরে পেওনিয়ার কার্ড দেয়া চালু রাখলেও সেটার সংখ্যা খুবই সীমিত করেছে। এছাড়া কার্ডে এপ্লাই করতে হলে আপনার একাউন্টে আগে ১০০ ডলার থাকতে হবে। এসম্পর্কে বিস্তারিত জানতে দেখুন: কিভাবে পেওনিয়ার মাষ্টার কার্ড পাবেন?
এগুলোর প্রধান কারন ফেইক ডকুমেন্টস দিয়ে বাংলাদেশ থেকে নামে-বেনামে হাজার হাজার কার্ড করে নিয়ে সেগুলো বিক্রি করা হচ্ছে। যার ফলে পেওনিয়ার, নেটেলারের মত ডিজিটাল পেমেন্ট সার্ভিস গুলো বাংলাদেশে তাদের সেবার মান কমিয়ে দিচ্ছে এবং দিনে দিনে কার্ড দেয়া বন্ধ করে দিচ্ছে বা কমিয়ে দিচ্ছে।
এখন সমাধান কি?
এপর্যন্ত পড়ার পর আপানার মাথায় প্রশ্ন আসতে পারে পেমেন্ট নিয়ে চারিদিকে যখন এতো সমস্যা তখন সমাধান কি? এখন কথা বলবো সমাধান নিয়ে।
আপনি যদি কার্ড কিংবা অনলাইন পেমেন্টের ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখ্যীন হন সেক্ষেত্রে আপনি নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারেন Eastern Bank এর Aqua Prepaid Card। এটি একটি ডুয়েল কারেন্সি Prepaid Master Card, এর মাধ্যমে দেশে-বিদেশে অনলাইন কিংবা অফলাইন যেকোনো পেমেন্ট আপনি করতে পারবেন। এটি পাওয়া একেবারে সহজ এবং খুব বেশি সময়ের প্রয়োজন হয়না।
চলুন প্রথমেই জেনে নেই Eastern Bank এর Aqua Prepaid Master Card পেতে কি কি প্রয়োজন হবে।
- ২কপি ছবি
- ন্যাশনাল আইডি কার্ড কিংবা পাসপোর্টের ফটোকপি। (অরিজিনাল কপি সাথে নিতে হবে)
- কার্ড ফি ৫০০টাকা, ভ্যাট ৭৫টাকা (মোট- ৫৭৫টাকা)
- ডলার এনডোর্সমেন্ট এর জন্য পাসপোর্ট (অবশ্যই থাকতে হবে)
কিভাবে EBL Aqua MasterCard এর জন্য আবেদন করবেন
- আপনার নিকটস্থ Estern Bank Limited এর কোনো ব্রাঞ্চে গিয়ে কার্ড ডিভিশন এ যোগাযোগ করুন। দায়িত্বে থাকা ব্যাক্তিকে জানান যে আপনি Eastern Bank এর Aqua Prepaid Master Card নিতে আগ্রহী। তিনি আপনাকে বেশ কয়েকটি ফর্ম দিবেন। সবগুলো ফর্ম সতর্কভাবে পূরন করুন। সাধারন ব্যাংক একাউন্ট খোলার সময় যে ধরনের ফর্ম পূরন করা হয় ঠিক একই ধরনের ফর্ম এখানে আপনাকে পূরন করতে হবে। যদি কোনো বুঝতে কোনো সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে দায়িত্বরত অফিসারের কাছ থেকে সাহায্য নিতে পারেন।
- ফর্মগুলো পূরন করার সময় খেয়াল করবেন “E-commerce Enrollment Form” নামের ফর্মটি আপনি পূরন করছেন কিনা। কারন আপনি যেহেতু এটা দিয়ে ইন্টারন্যাশনাল পেমেন্ট করবেন তাই E-commerce Enrollment Form টি পূরন করা আপনার জন্য বাধ্যতামূলক। এটা পূরন না করলে আপনি USD কারেন্সি তে পেমেন্ট করতে পারবেন না।
- সব ডকুমেন্টস সাবমিট করার পর ভেরিফিকেশন এর জন্য ৭-১০ দিন সময় লাগবে (এখানে দিন বলতে কর্মদিবস বোঝানো হয়েছে) । ভেরিফিকেশন হয়ে গেলে ফর্মে দেয়া আপনার মোবাইল নাম্বারে একটি মেসেজ পাবেন। যদি ১০দিনের মধ্যে কোনো মেসেজ না পান তাহলে Estern Bank Limited এর কাস্টমার কেয়ার ১৬২৩০ নাম্বারে ফোন দিয়ে আপডেট জানুন।
কিভাবে EBL Aqua Card এ ডলার রিচার্জ করবেন
- ডকুমেন্টস সব ভেরিফাই হয়ে গেলে পাসপোর্ট এবং কত টাকা/ডলার রিচার্জ করতে চান সেটা নিয়ে ব্যাংকের কার্ড ডিভিশনে চলে যান। প্রথমেই পাসপোর্টে ডলার এনডোর্স করিয়ে নিন। বাংলাদেশ সরকারের নিয়ম অনুযায়ী সার্কভুক্ত দেশে সর্বোচ্চ ৫০০০ USD এবং নন সার্ক দেশগুলোতে সর্বোচ্চ ৭০০০ USD এনডোর্স করতে পারবেন। কম করলেও সমস্যা নেই পরে বাড়ানো যাবে।
- এবার আসা যাক ডলার রিচার্জ কিভাবে করবেন। এটা খুব কঠিন কিছু না। আপনি জমা স্লিপে প্রথমে আপনার নাম লিখবেন একাউন্ট নাম্বারের যায়গাটি খালি রাখবেন। কার্ড নাম্বারের যায়গায় আপনি কার্ডের পুরো নাম্বারটি লিখবেন।কারেন্সি র যায়গায় USD এবং BDT ২টা অপশন থাকবে। আপনি USD সিলেক্ট / টিক মার্ক দিবেন।
- এবার জমা দেয়ার পালা, জমা দেয়ার সময় ক্যাশ কাউন্টারে যিনি থাকবেন তিনি আপনাকে কনফার্ম করবেন যে আপনি ডলার পার্টে টাকা জমা দিচ্ছেন। একটা ব্যাপার খেয়াল রাখতে হবে যে ডলার রেট একেকদিন একেক রকম থাকে। তাই কতটাকা জমা দিলে কত ডলার পাবেন এটা আগে থেকে নিশ্চিত থাকা যায় না।
- আপনি কাউন্টারে থাকা অফিসারের কাছে ওইদিনের ডলার রেট সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন। তবে ডলার রেট খুব বেশি ওঠানামা করে না। ৮০ টাকা এর আশেপাশেই রেট থাকে। যেমন আজকরে ডলার রেট ১ ডলার = ৮৩.১৯টাকা।
- এবার ব্যাংকের সব কাজ শেষ। পাসপোর্টে ডলার এনডোর্স হতে ২/১ দিন সময় লাগতে পারে। তবে ট্রানজেকশন শুরু করার আগে অবশ্যই একবার কাস্টমার কেয়ারে ফোন দিয়ে আপনার একাউন্টের ফরেন পার্ট ওপেন করে নিবেন। এটা হয়ে গেলে আপনি ট্রানজেকেশন শুরু করতে পারবেন।
Aqua MasterCard বিষয়ক প্রশ্ন-উত্তর
এই কার্ডের মেয়াদ কতদিন?
নরমাল সব ধরনের মাস্টার কার্ডের মত এই কার্ডের মেয়াদ ও ৩ বছর।
কার্ডের ব্যালেন্স জানবেন কিভাবে?
ব্যালেন্স জানার জন্য Eastern Bank Limited এর কাস্টমার কেয়ার ১৬২৩০ নাম্বারে ফোন করতে হবে।
একসাথে সর্বোচ্চ কত ডলার পেমেন্ট করা যাবে?
কোনো সমস্যা ছাড়াই আপনি ১০০ডলার পর্যন্ত পেমেন্ট করতে পারবেন। তবে এর বেশি ৩০০ডলার পর্যন্ত ও করা যাবে। সেক্ষত্রে কি কারনে পেমেন্ট করছেন এটা ব্যাংক কে লিখিত আকারে জানাতে হবে।
এই কার্ড পেতে কি আমার Eastern Bank এ একাউন্ট থাকতে হবে?
না একাউন্টের প্রয়োজন নেই।
এই কার্ডে কি BDT (বাংলাদেশী টাকা) রাখা যায়? USD & BDT কি একসাথে রাখা যায়?
হ্যা BDT রাখা যায়। USD & BDT ও একসাথে রাখা যায়।
কার্ড ব্যবহার করে কি আমি ATM থেকে টাকা তুলতে পারবো?
হ্যা, Eastern Bank Limited এর সকল ATM সহ Master Card এর লোগো সম্বলিত সব ব্যাংকের ATM থেকে টাকা তুলতে পারবেন।
এটা কি বিদেশে ব্যবহার করা যাবে?
হ্যা, বিদেশে কোনো কিছু কেনাকাটা করা সহ যেকোনো দেশের Master Card এর লোগো সম্বলিত সব ধরনের ATM থেকে সেই দেশের কারেন্সির টাকা তুলতে পারবেন।
ফেসবুক, ইউটিউব, গুগলে বিজ্ঞাপন দেয়া যাবে?
হ্যা, ফেসবুক, ইউটিউব, গুগলে বিজ্ঞাপন দেয়া যাবে।
অনলাইন থেকে সব ধরনের কেটাকাটা করা যাবে?
এডাল্ট ওয়েবসাইট এবং অনলাইন গ্যাম্বলিং (জুয়া) ছাড়া সবখানে পেমেন্ট করা যাবে।
আশাকরি আমার এ লেখাটি যারা নতুন ফ্রিল্যান্সার তাদের জন্য কিছুটা হলেও কাজে আসবে। তো আর দেরী না করে আজই আপনার মাষ্টারকার্ডটি করে ফেলুন এবং অনলাইনে টাকা আদান প্রদানের ঝামেলা কে Good Bye জানান।
তো আগামীতে আবার কথা হবে কোনো নতুন একটি বিষয়ে, অথবা আপনার পচ্ছন্দের বিষয়টি কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। আমি চেষ্টা করবো এই বিষয়ে লেখা দেয়ার জন্য।
লেখাটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না। ভালো থাকুন।