পেওনিয়ার (Payoneer Card) কি ? কিভাবে এ্যাকাউন্ট তৈরি করবেন ?

Payonner

পেওনিয়ার প্রিপেইড (মাষ্টারকার্ড) পেমেন্ট মেথড বর্তমানে একজন বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সার (Freelancer) এর জন্য এটি অপরিহার্য একটি বিষয়।

কেন ?

আপনি একজন প্রফেশনাল ফ্রিল্যান্সার হিসেবে যখন জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্স  মার্কেটপ্লেস গুলিতে কাজ করবেন এবং এই কাজের পারিশ্রমিক যা পাবেন সেই টাকা বাংলাদেশ থেকে পেতে হলে আপনাকে এমনই একটি অনলাইন ব্যাংকিং সেবা নিতে হবে।

আপনি খুব সহজেই আপনার অর্জিত টাকা বাংলাদেশ থেকে এই কার্ডের সাহায্যে উত্তোলন করতে পারবেন। শুধু তাই নয়, আপনি আপনার অনলাইনের বিভিন্ন কেনা-কাটা, সেবা গ্রহনে এটি ব্যবহার করতে পারবেন।

পেওনিয়ার (Payoneer) কি

Payonner

পেওনিয়ার প্রি-পেইড মাষ্টার কার্ড এমন একটি কার্ড যার মাধ্যমে আপনি যেকোন দেশের মূদ্রা (Currency) আপনার এই এ্যাকাউন্টে নিয়ে আসতে পারেন এবং বাংলাদেশের যেকোনো এটিএম (ATM) বুথ থেকে এই কার্ডের সাহায্যে টাকা উত্তোলন করতে পারেন। 

কিভাবে পেওনিয়ার এ্যাকাউন্ট তৈরি করবেন

আজ আমি আপনাদের সাথে খুব সহজেই বাংলাদেশ থেকে যেভাবে কিভাবে একটি প্রি-পেইড কার্ড পেতে পারেন এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো।

চিন্তায় আছেন … সহজ কেন বললাম

তো আসুন আমরা আজ একটি পেওনিয়ার কার্ডের জন্য এ্যাপ্লিকেশন সম্পন্ন করি।

কি কি জিনিস আগে থেকেই আপনার দরকার হবে ?

জ্বি, এই কয়েকটি জিনিস হাতের কাছে গুছিয়ে রেখেই আমাদের কাজ শুরু করতে হবে।

  • আপনার ভোটার আইডি বা ড্রাইভিং লাইসেন্স বা পাসপোর্ট (যে কোনো একটি)।
  • একটি ভেরিফাইড ইমেইল।
  • বাংলাদেশের যে কোনো একটি ব্যাংকে একটি এ্যাকাউন্ট থাকতে হবে।
  • একটি ভেরিফাইড মোবাইল নাম্বার।

এখন আমাদের হাতের কাছেই সব কিছু আমরা গুছিয়ে নিয়েছি, আসুন শুরু করা যাক।

১. পেওনিয়ার করার জন্য এখানে >> ক্লিক করুন

২য় ধাপ

২. এমন একটি স্ক্রিন আপনার সামনে আসবে, এখান থেকে আপনি সাইন-আপ (Sign Up) এ ক্লিক করুন।

৩য় ধাপ

৩. এবার আপনি এই ফর্মটি পূরণ করুন। মনে রাখবেন, আপনি একজন ব্যক্তি হিসেবে এ্যাকাউন্ট করছেন, কোম্পানি হিসেবে নয়।

আপনার নাম এবং জন্ম তারিখ অবশ্যই আপনার ভোটার আইডি বা ড্রাইভিং লাইসেন্স বা পাসপোর্ট (যে কোনো একটি) এর হুবহু মিল রেখে করতে হবে।

৪র্থ ধাপ

৪. এখানে আপনি এমন একটি ঠিকানা ব্যবহার করবেন যেখানে চিঠি সঠিকভাবে পৌছাবে। কারন, এই ঠিকনাতেই আপনার কার্ডটি আসবে।

আপনার নিজের মোবাইল নাম্বারটি এখানে ব্যবহার করুন।

৫ম ধাপ

৫. এখানে আপনি এ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড এবং একটি সিকিউরিটি প্রশ্ন সেট করবেন। এরপর আপনার ভোটার আইডি বা ড্রাইভিং লাইসেন্স বা পাসপোর্ট (যে কোনো একটি) এর নম্বার দিন এবং এটি কোন দেশের জন্য প্রযোজ্য সেই দেশের নাম লিখুন। 

৬. অভিনন্দন! আপনি সঠিক ভাবে পেওনিয়ার কার্ডের জন্য এ্যাপ্লিকেশন করতে পেরেছেন।

এবার আপনার এ্যাপ্লিকেশনটি পেওনিয়ার টিম রিভিউ করবে এবং আপনাকে কিছুদিনের মধ্যেই অনুমোদন দিয়ে একটি ইমেইল করবে।

এরকম একটি ইমেইল আপনি পেওনিয়ার থেকে পাবেন, এ্যাকাউন্ট করা সম্পন্ন হয়ে গেলে।

*** টিপস: অনেক সময় পেওনিয়ার এর ইমেইলগুলি ইনবক্সে আসে না, তাই আপনি ইমেইল না পেলে স্প্যাম (Spam) এ চেক করে দেখুন ***

আসুন আমরা এবার আমাদের তৈরি করা এ্যাকাউন্টে প্রথম বার প্রবেশ করি।

আপনি এ্যাকাউন্টে লগ-ইন (Login) করার জন্য এখানে ক্লিক করুন বা সরাসরি পেওনিয়ারের ওয়েবসাইট এ ভিজিট করুন।

এখানে আপনি আপনার সঠিক ইমেইল এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে লগ-ইন করুন।

এখন আপনি আপনার এ্যাকাউন্টের সিকিউরিটি বৃদ্ধির জন্য আরো দুটি সিকিউরিটি প্রশ্ন সেট করবেন। মনে রাখবেন, এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর আপনাকে মনে রাখতে হবে।

এটি হচ্ছে আপনার পেওনিয়ার এ্যাকাউন্ট, যেটি প্রাথমিক অবস্থায় রিভিউতে রয়েছে।

এভাবে ৪-৫টি কর্মদিবস পরে আপনার কাছে এ্যাকাউন্ট সম্মতি (Approval) একটি ইমেইল আসবে। আপনি তখন বুঝতে পারবেন যে, আপনার এ্যাকাউন্টটি পে​ওনিয়ার অনুমোদন দিয়েছে।

আগে বাংলাদেশ থেকে এ্যাকাউন্ট অনুমোদন দিলেই আপনার জন্য একটি মাষ্টার কার্ড পাঠিয়ে দেয়া হতো। কিন্তু বর্তমানে আর আপনি এই সুবিধা পাবেন না।

চিন্তা করার কিছুই নেই। কারন কার্ড আনাটা এখনও ফ্রি।

তবে নিয়মটা বদলেছে, অবশ্য আমার খুবই ভালো লেগেছে নতুন নিয়মটি। কারন, আগে বাংলাদেশ থেকে প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে বা সখের বশে কার্ড অর্ডার করা হতো, এখন অন্তত সেটি কমে যাবে।

আপনার পেওনিয়ার এ্যাকাউন্টটি অনুমোদন পাবার পরে আপনার কাজ হচ্ছে আপনার এই এ্যাকাউন্টে ১০০ ডলার (100$) জমা করতে হবে। এই টাকাটি আপনি অন্য যেকোনো একটি পেওনিয়ার এ্যাকাউন্ট থেকে নিতে পারেন। তবে সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি ডলারটি কোনো মার্কেটপ্লেস থেকে কাজ করে লোড করেন।

তাহলেই আপনার এ্যাকাউন্টে কার্ডে এ্যাপ্লাই করার জন্য একটি অপশন চলে আসবে, যেখান থেকে আপনি ফ্রিতেই (FREE) পূর্বের মত কার্ডের জন্য এ্যাপ্লাই করতে পারবেন।

​কি কি কারনে আপনার পেওনিয়ার এ্যাকাউন্টটি বাতিল হতে পারে

  • যদি আপনার ভোটার আইডি কার্ড না থাকে, তারপরেও আপনি ভুয়া ভোটার আইডি কার্ড তৈরি করেন এবং সেটি দিয়ে এ্যাপ্লাই করেন।
  • ​যদি আপনি আপনার ব্যক্তিগত তথ্য গোপন বা পরিবর্তন করে দেন।
  • ​মাষ্টার কার্ড পাবার আশায় যদি আপনি দেশের ভিতর থেকে ১০০ ডলার পেমেন্ট লোড করেন।

আপনাকে মনে রাখতে হবে, আপনার সকর তথ্য পেওনিয়ার টিম যাচাই-বাছাই করেই আপনার এ্যাকাউন্ট কে অনুমোদন দিয়ে থাকে। সুতরাং, ভুল তথ্য দেয়া একেবারেই ঠিক না।

​এছাড়া, বাংলাদেশের ভিতর থেকে কারো কাছ থেকে ডলার কিনে এ্যাকাউন্টে আনাও ঠিক না। কারন, পেওনিয়ার এ্যাকাউন্টটি আপনি ব্যবহার করবেন ইন্টারন্যাশনাল লেনদেনের জন্য কিন্তু তা না করে যদি আপনি এ দেশ থেকেই সকল লেনদেন করেন তাহলে তো এ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড হবেই।

কিভাবে পেওনিয়ারে প্রথম পেমেন্ট রিকোয়েস্ট করবেন

আপনার পেওনিয়ার এ্যাকাউন্টে প্রথমবার টাকা লোড করার জন্য আপনাকে একটি পেমেন্ট রিকোয়েস্ট পাঠাতে হবে। যার কাছ থেকে আপনি পেমেন্টটি নিচ্ছেন তার কাছে।

কিভাবে কাজটি করবেন?

১. প্রথমে আপনি পেওনিয়ার এ্যাকাউন্টে লগইন করুন এবং চিত্রানুযায়ী Receive > Request a Payment এ ক্লিক করুন।

২. এবার আপনার সামনে Payment Details এর একটি ফর্ম আসবে, ফর্মটি সঠিক ভাবে পূরণ করুন।

যেমন: কত ডলার আপনি রিকোয়েষ্ট করছেন, কি কারনে আপনার ডলার লাগবে এবং কত দিনের মধ্যে লাগবে। এসকল বিষয়ে জানিয়ে দিতে হবে।

৩. এছাড়া নিচে আরো একটি অংশ রয়েছে, আপনি যার কাছে পেমেন্ট রিকোয়েষ্ট করছেন তার সম্পর্কিত তথ্য এই অংশে দিতে হবে।

যেমন: তার নাম, ইমেইল এবং দেশ। সকল তথ্য সঠিক ভাবে দেয়া হয়ে গেলে আপনি এবার SEND এ ক্লিক করুন।

৪. এই মেসেজটি দেখলেই আপনি বুঝতে পারবেন যে, আপনার রিকোয়েষ্টটি সঠিক ভাবে প্রেরন করা হয়েছে। এ সম্পর্কে আরো নিশ্চিত হতে Manage Payment Request এ ক্লিক করুন।

৫. এই অংশে আপনি দেখতে পাবেন যে, আপনার রিকোয়েষ্ট এর বর্তমান অবস্থা কি।

এভাবে করে আপনি খুব সহজেই কারো কাছ থেকে পেমেন্ট রিকোয়েষ্ট এর মাধ্যমে ডলার নিতে পারবেন। শুধু তাই নয়, আপনি চাইলে অনলাইনে ক্লায়েন্টের কাজের বিলের ইনভয়েজও তৈরি করে দিতে পারবেন। 

কিভাবে নতুন পেওনিয়ার প্রিপেইড মাষ্টারকার্ড এর জন্য আবেদন করবেন

​আপনার পেওনিয়ার কার্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবার আগেই আপনাকে নতুন কার্ডের জন্য আবেদন করতে হবে। এখানে নতুন কার্ডের জন্য আবেদন করতে কোনো টাকা লাগবে না। তো চুলন পুরো প্রক্রিয়াটি দেখে নেয়া যাক।

১. সর্বপ্রথম আপনি পেওনিয়ার এ্যাকাউন্টে লগইন করুন। দেখতে পাবেন এখানে পেওনিয়ার থেকে আপনাকে বলা হয়েছে নতুন কার্ডে আবেদন করার জন্য।

২. লিংকটিতে ক্লিক করলে পেওনিয়ার কার্ড এর জন্য পুনরায় আবেদন করার একটি ফর্ম আসবে, এই ফর্মটি সঠিক ভাবে পূরন করুন।

৩. রি-ইশ্যূ বাটনে ক্লিক করার পরে, আপনাকে কনফারমেশনের জন্য একটি লিংক দেয়া হবে।

৪. দেখুন আপনার নতুন কার্ডটি সঠিকভাবে রি-ইশ্যূ হয়েছে। এই লিংকে গেলে দেখতে পাবেন যে আপনার জন্য নতুন একটি কার্ডের অর্ডার সম্পন্ন হয়েছে।

৫. এর কিছুক্ষনের মধ্যেই আপনার ইমেইলে একটি কনফারমেশন মেইল যাবে। অর্থাৎ আপনি নিশ্চত হলেন যে, কার্ডটি সঠিকভাবে ​রি-ইশ্যূ হয়েছে।

নতুন ইশ্যু করা কার্ডটি কিভাবে এ্যাকটিভ করবেন

নতুন ইশ্যু করার ১০-১৫ দিনের মধ্যেই আপনার নিকটস্থ পোষ্ট অফিসে গিয়ে খোজ নিন। কারন, সাধারনত এ সকল কার্ড বাসায় আপনার ঠিকানায় তারা পৌছে দেয় না।

এবার আসুন জেনে নেই, নতুন কার্ডটি পাবার পর সেটি কিভাবে সক্রিয় করতে হবে।

১. ইনভেলপটি সাবধানতার সাথে ছিড়ুন। এখন আপনি আপনার কাংখিত প্রিপেইড কার্ডটি দেখতে পাবেন।

২. আপনার পেওনিয়ার এ্যাকাউন্টে লগইন করুন এবং উপড়ের ডান পাশের Settings > Payoneer Card এই অপশনটিতে ক্লিক করুন।

৩. এখানে আপনি দেখতে পাচ্ছেন যে, পুরাতন এবং নতুন ২টি প্রিপেইড কার্ডই দেখাচ্ছে। এখন আপনাকে নতুন কার্ডটি সক্রিয় করার জন্য “Activate” বাটনে ক্লিক করতে হবে।

৪. এখানে আপনাকে আপনার প্রিপেইড মাষ্টারকার্ডের ১৬ ডিজিটের নাম্বারটি দিতে হবে। এবং সকল শর্ত মেনে নিয়ে পুনরায় “Activate” বাটনে ক্লিক করতে হবে।

৫. আপনি দেখতে পাচ্ছেন যে আপনার কার্ডটি সফল ভাবে এ্যাকটিভ হয়ে গেছে এবং আপনার ইমেইলে ২টি মেইল চলে গেছে। এখন আপনি ইমেইল চেক করুন।

৬. আপনি দেখতে পাচ্ছেন যে আপনার কার্ডটি সফল ভাবে এ্যাকটিভ হয়ে গেছে , ​যা পেওনিয়ার থেকে​ ইমেইলের মাধ্যমে নিশ্চিত করেছে। ​এখন আপনারা যারা কার্ডটি ব্যবহার করে বাংলাদেশের যেকোনো বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করতে চান, তাদের দরকার প্রিপেইড কার্ডের পিন নাম্বার। এবার আপনি আপনার ইমেইলের ২য় মেইলটি চেক করুন।

৭. এবার “View Pin” বাটনে ক্লিক করুন (এই লিংটি ৩০ মিনিটের জন্য এ্যাকটিভ থাকবে), আপনি যদি ​পেওনিয়ার এ্যাকাউন্টে লগইন থাকেন তাহলে সরাসরি আপনাকে পেওনিয়ার ড্যাসবোর্ড এ নিয়ে যাবে এবং একটি সতর্কতা মূলক নোটিশ দেখাবে। যেখানে OK করলে আপনাকে ৬০ সেকেন্ডের জন্য আপনার কার্ডের পিন নাম্বারটি দেখানো হবে।

৮. পিন নাম্বারটি অবশ্যই সংরক্ষন করে রাখুন। তো এভাবে আপনি নতুন একটি পেওনিয়ার প্রিপেইড মাষ্টারকার্ড এ্যাকটিভ করতে পারেন।

৯. আপনার পুরাতন কার্ডটি অল্প কিছুুক্ষনের মধ্যেই নিস্ক্রিয় হয়ে যাবে। যদি পুরাতন কার্ডে কোনো ডলার থেকে থাকে সেটি অটোমেটিক ভাবেই নতুন কার্ডে যোগ হয়ে যাবে।বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকের মাষ্টারকার্ড সম্পর্কে জানুন:

​আমি চেষ্টা করেছি এই পোষ্টটির মাধ্যমে যারা এখনও পেওনিয়ার কার্ড ব্যবহার করতে পারছেন না, তাদের জন্য একটি সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়ার জন্য।

আপনারা যারা বাংলাদেশ থেকে আপওয়ার্ক, ফাইবারসহ বিভিন্ন জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস এ কাজ করছেন, তাদের জন্য পেওনিয়ার দিয়ে টাকা উত্তোলন করাটাই ভালো উপায়।

আশা করছি পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে শেয়ার করবেন।  কেননা, এখনও অনেকেই আছে যারা ফ্রিল্যান্সিং করছে অথচ সঠিক ভাবে পেমেন্ট নিয়ে আসতে পারছেনা। এবং কিছু অসাধূ শ্রেণীর মানুষ দ্বারা তারা ভুল পথে চলে যাচ্ছে বা প্রতারিত হচ্ছে।